বাংলাদেশে প্রচলিত কিন্তু ক্ষতিকর খাবার, যা আপনার মৃত্যু ঘটাতে পারে।
বন্ধুরা আজকের আর্টিকেলটি আমার প্রিয় বাংলাদেশী ভাই বোনের জন্য। বাংলাদেশে প্রচলিত কিন্তু ক্ষতিকর খাবার, যা আপনার মৃত্যু ঘটাতে পারে। বাংলাদেশের মানুষ চাল, মাছ, মাংস, শাকসবজি মিলিয়ে কয়েক হাজার ধরনের খাবার খেয়ে থাকেন। তবে এসবের মধ্যে বেশ কিছু খাবার রয়েছে যা অনেক সময় মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে।
কোন খাবারের কারণে হওয়া ক্ষতি তাৎক্ষণিকভাবে বোঝা না গেলেও তার দীর্ঘ মেয়াদে শরীরের ক্ষতি করে যেসব খাবার অবস্থা ভেদে আপনার শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে এরকম কয়েকটি খাবার সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
বাংলাদেশে প্রচলিত কিন্তু ক্ষতিকর খাবার, যা আপনার মৃত্যু ঘটাতে পারে।
পটকা মাছ
পটকা মাছ যার বৈজ্ঞানিক নাম "টেট্রাডন কুটকুটিয়া"। বাংলাদেশ জাপান কোরিয়া সহ বেশকিছু দেশের মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় এই মাছ। কিন্তু এই মাছ ঠিকভাবে প্রসেস করা সম্ভব না হলে সেটি কয়েক ঘন্টার মধ্যে মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।
এর শরীরে থাকে বিষাক্ত নিউরো টক্সিন সায়ানাইড এর তুলনায় বেশি কার্যকর হতে পারে। এমনিতে মাছটি হয়তো বিষাক্ত নয় কিন্তু এর বিষাক্ত অংশটি কোন ভাবে মানুষের শরীরে গেলে আর তা মানুষের পাকস্থলীতে গেলে অল্পক্ষণের মধ্যেই মানুষকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করতে পারে ,এমনকি মৃত্যুও ঘটাতে পারে তাই এই মাছ খাওয়ার আগে দক্ষতার সঙ্গে মাছের শরীরের বিষাক্ত অংশটি আলাদা করে ফেলতে হবে।
মাশরুম
বিশ্বের অনেক দেশেই মাশরুম একটি জনপ্রিয় খাবার এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার, যা রক্তচাপ কমাতে, টিউমার কোষের বিরুদ্ধে, বহুমূত্র রোগীদের জন্য এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে, হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ,বাধ্য রোগের বিরুদ্ধে উপকারী।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন প্রকৃতিতে মাশরুমের হাজার রকমের জাত রয়েছে এবং এগুলোর অনেকগুলো মানবদেহের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। মাশরুমের নানা জাতের মধ্যে বাংলাদেশের আট থেকে দশটি জাতের চাষ হয়ে থাকে।
কিন্তু বাংলাদেশে পাওয়া যায় মাশরুমের এমন অনেক জাত, বিশেষ করে বুনো মাশরুম অনেক সময় শরীরের জন্য ক্ষতিকর বলে প্রমাণিত হতে পারে। বিশেষ করে ব্যাঙের ছাতা বলে পরিচিত বুনো মাশরুম এ এক ধরনের ছত্রাক থাকে যা লিভার-কিডনির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
খেসারির ডাল
বাংলাদেশের মানুষের মসুর ডালের পাশাপাশি অনেকের খাদ্যতালিকায় খেসারির ডাল থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ডালে বোয়া(BOAA) নামের এক প্রকার এলাইন অ্যামিনো এসিড থাকতে পারে যা বিষাক্ত নিউরো টক্সিন তৈরি করে।
এই এসিড স্নায়ুবিক পঙ্গুত্ব তৈরি করতে পাড়ে। এই রোগের লক্ষণ হঠাৎ করেই দেখা যায়।এতে করে হাঁটতে গিয়ে ব্যথা অনুভব করা এবং অসহ্য যন্ত্রণা হওয়ার মতো ঘটনা ঘটতে পারে হতে পারে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা।
আলু
আলুতে শেকড়ের জন্ম হলে সেখানে গ্লাইকো আলকালাইন নামে এক ধরনের উপাদান তৈরী হয়। বিশেষ করে দীর্ঘদিন যাবৎ আলু পড়ে থাকলে এই ধরনের উপাদান এর জন্ম হয়। অনেক সময় গাছের পাতায় কাণ্ডে এই উপাদান থাকে। বিশেষ করে আলুর গায়ে শেকড় জন্মালে আলুর গায়ে যে লাল রঙের গাদ তৈরি হয় সেখানে এই উপাদান বেশি থাকে ।
বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি বলেছেন এই গ্লাইকো আলকালাইন শরীরে প্রবেশ করলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া ডায়রিয়া, মাথাব্যথা, এমন কি মানুষ কোমাতে ও চলে যেতে পারে। বলা হয়ে থাকে কেউ কোন ভাবে 3 থেকে 6 মিলিগ্রাম পরিমাণ খেয়ে ফেললে মৃত্যু হতে পারে।
এ ছাড়া আলুতে অনেক সময় সবুজ রঙের এক ধরনের পদার্থ দেখা যায়। সেটা হলো কারসিনোজেন নামের একটি উপাদান যা ক্যান্সারের কারণ হতে পারে, এই ধরনের আলু খাওয়া উচিত নয়।
টমেটো
টমেটো গাছের পাতা এবং কান্দে অ্যালকালাইন থাকে। যা পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কাঁচা টমেটোর ভেতরেই এই উপাদান থাকে বলে মনে করা হয়। এ কারণে বেশি কাঁচা টমেটো খাওয়া উচিত নয় বলে মত দেন পুষ্টিবিদেরা। বেশি পরিমাণে কাঁচা টমেটো খেলে যে কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।
আপেল
আসলে ঠিক আপেল নয় আপেলের বীজ এর ভেতর খানিকটা পরিমাণে ছায়ানেট থাকে। ফলে কারো শরীরের ভেতর যদি বেশি পরিমাণে আপেলর বিচি প্রবেশ করে তাহলে তাকে মেরে ফেলার মত সায়ানাইড তৈরি করতে পারে। আর সায়ানাইড হল একটি মারাত্মক ধরনের বিষ ।
বিচি সহ আপেলের জুস তৈরি করা হলে সে জুস এ মারাত্মক বিষ তৈরি হতে পারে। তবে আপেলের বিচি বাদ দিলে আপেলের বাকি অংশে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি রয়েছে।
কাঁচা মধু
মৌমাছির চাক ভাঙার তাজা মধু সংগ্রহ করতে অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন পাস্তুরিত করা হয়নি হয়নি এমন কাঁচা মধু শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
কারণ মধুর মধ্যে অনেক বিষাক্ত উপাদান থাকতে পারে, যার কারণে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া এমন মধু খাওয়ার ফলে দুর্বল লাগা, অতিরিক্ত ঘাম হওয়া , বমি করার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তাই বিশেষজ্ঞরা কাঁচা মধু না খেয়ে সেটা প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ার পরামর্শ দেন। বিশেষ করে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে মৌমাছির চাকের কোন অংশ মধুর মধ্যে নেই।
মটরশুঁটি-শিমের বিচি
বাংলাদেশে মটরশুঁটি-শিমের বিচি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি খাবার। অবশ্য শিমের বিচি সারাবিশ্বেই একটি জনপ্রিয় খাবার। কিন্তু পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার বলেছেন মটরশুঁটির মধ্যে ফাইটো হেমাগলুটিনিন নামের একটি পদার্থ থাকে যা অনেকের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
এ কারণে তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন যে রান্নার আগে মটরশুঁটির শিমের বিচি অবশ্যই 15 মিনিট ধরে পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি ফেলে দিয়ে আবার রান্না করতে হবে।
কামরাঙ্গা
কামরাঙ্গা সাধারণ মানুষ এটি খেলে কোন সমস্যা নেই। তবে যাদের কিডনির বা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা রয়েছে তাদের জন্যই এই ফলটি ক্ষতিকারক বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ আয়েশা সিদ্দিকা।
কচু
কচু বাংলাদেশ একটি সবজি এবং এর পাতা শাক হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পুষ্টিবিদরা বলছেন কচু গাছ যদি ছায়ায় বড় হয় তাহলে এর মধ্যে এমন একটি কম্পনেন্ট তৈরি হয় যা অনেকের জন্য এলার্জি তৈরি করে।
ফলে কচু খেলে তাদের চুলকানি হয় গোলা ফুলে যায়। এর কারণ হলো কচুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অক্সালেট। অনেক সময় এতে করে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটতে পারে।
তাই অবশ্যই কচু জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করতে হলে আপনাকে লেবু খেতে হবে এতে করে সেটা কচুর অক্সালেট এর সঙ্গে সমন্বয় এর কাজ করে।
ডিম
ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। কিন্তু কাঁচা ডিম খাওয়ার, আধা সেদ্ধ ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদেরা। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
ক্যান ফুড
ব্যস্ততার কারণে এখন অনেকেই ক্যান এ থাকা খাবার বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খেতে পছন্দ করেন, কারণ এগুলো অনেকটা প্রস্তুত অবস্থায় থাকে বলে সহজেই খাওয়া যায়। কিন্তু এই জাতীয় খাবার মানসম্পন্ন না হলে বা তৈরি প্রক্রিয়ায় ত্রুটি থাকে তার ডায়রিয়া, ক্যান্সার ইত্যাদির মতো সমস্যা তৈরি করতে পারে। এছাড়া শুটকি মাছ ইত্যাদি অনেক সময় সালফার ব্যবহার করা হয় যা পেটে গেলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
বন্ধুরা এই ছিল বাংলাদেশে প্রচলিত কিন্তু ক্ষতিকর খাবার, যা আপনার মৃত্যু ঘটাতে পারে, নিয়ে আর্টিকেল। আর্টিকেলটি পড়ে যদি আপনার ভাল লাগে অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করবেন এবং কমেন্ট এ আপনার মতামত জানাতে পারেন।
আমাদের সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন